রাসূল হারাম হালালের বিধান দিতে পারেন কিনা

রাসুল সা. পারেন। প্রমাণ লাগবে কুরআন হাদীস থেকে? দলিল দিচ্ছি। সুরা হাশর আয়াত ৭।

“…রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।”
(৫৯নং সূরা আল হাশর, আয়াত ৭)

ফিকহের পরিভাষায় ফুকাহাদের স্তর বিন্যাসের সময় রাসুল কে “সাহেবে শরীয়ত” বা “শরিয়তওয়ালা” বলা হয়।

clear হচ্ছে না? আচ্ছা। ফকীহদের rank আছে। এর মধ্যে রাসুলের rank সবার উপরে, সেটা হচ্ছে “সাহেবে শরিয়ত”।

তো এ Rank এ থাকলে কি সে হারাম হালার বিধান দিতে পারেন? প্রমাণ কি? আলবত। একমাত্র ইনিই পারবেন। আর আল্লাহ তো অনেক উপরের কথা।

কয়েকটা উদাহরণ দিচ্ছি যে, রাসূল হারাম বলেছেন বা হারাম করেছেন আল্লাহর সরাসরি সুস্পষ্ট কোনো কুরআনের আয়াত নাযিল ছাড়া!

যেমন
(১)
দাড়ি কাটতে রাসূল নিষেধ করেছেন। সেটা কি হারাম না? পবিত্র কুরআনে কোথাও তো আল্লাহ দাড়ি রাখতেও বলেননি কাটতেও বলেননি।

আচ্ছা, দাড়ি রাখা কি আল্লাহর আদেশ, নাকি নবীর আদেশ? কেউ বলে দাড়ি রাখা সুন্নাত, কেউ বলে ওয়াজিব, কেউ বলে ফরজ।

পবিত্র কুরআনে সরাসরি দাড়ি রাখার কথা বলা হয়নি। তবে কুরআনে একটি আয়াত আছে যেখানে দাড়ি সম্পর্কে বলা আছে। কুরআনে এসেছে, মুসা (আঃ) তার কওমের (গোষ্ঠির) নিকট ফিরে এসে যখন দেখলেন তার কওম গোমরাহ হয়ে গেছে, তখন তিনি হারুন (আঃ)-কে প্রশ্ন করলেন এবং হারুন (আঃ) জবাব দিলেন।

“হে আমার মায়ের ছেলে! আমার দাড়ি ধরো না এবং আমার মাথার চুলও টেনোনা…”
(সূরা তাহাঃ৯৪)

অর্থাৎ এখানে বুঝা যাচ্ছে মুসা (আঃ) তার ভাই হারুন (আঃ) এর দাড়ি ধরেছিলেন। অন্যকথায়, হারুন (আঃ) যিনি একজন আল্লাহ্র নবী; তার দাড়ি ছিল। কিন্তু এখানে দাড়ি রাখার ব্যাপারে সুস্পষ্ট হুকুম পাওয়া যায় না। তবে, কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় বলা হয়েছে,

“তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর”

এটির উল্লেখ আছে, সূরা আলে ইমরানের ১৩২নং আয়াতে, সুরা নিসার ৫৯নং আয়াতে, সূরা মায়িদাহর ৯২নং আয়াতে, সূরা আনফালের ১নং, ২০নং ও ৪৬নং আয়াতে, সূরা নূরের ৫৪নং ও ৫৬নং আয়াতে আরো অনেক আয়াতে।

এখান থেকে স্পষ্ট যে রাসূল (সা) এর আনুগত্য করাটাও আল্লাহ্র আনুগত্যে করার মতই জরুরি।

হযরত ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-তোমরা মুশরিকদের বিরোধীতা কর। দাড়ি লম্বা কর। আর গোঁফকে খাট কর।
আর ইবনে ওমর রাঃ যখন হজ্ব বা ওমরা করতেন, তখন তিনি তার দাড়িকে মুঠ করে ধরতেন, তারপর অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলতেন। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৫৫৩]

২-হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা গোঁফকে কর্তন কর, এবং দাড়িকে লম্বা কর। তোমরা অগ্নিপূজকদের বিপরীত কর।
[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৬২৬]

তথ্যসূত্রঃ
১. দাড়ি সম্পর্কে রাসূল সাঃ এর বাণী
http://jamiatulasad.com/?p=1813
৩. নূরানী চেহারা, মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লাহ
http://www.alkawsar.com/article/509

যেমন, জাকির নায়েকের এই লেকচার শুনেন। তিনি ফরজ বলেছেন। আপনি কি তার সাথে একমত?

(২)
বাদ্যযন্ত্র বাজানো রাসূল নিষেধ করেছেন।
রাসূল (সা.) বাদ্যযন্ত্র ও গান-বাজনা হ’তে সতর্ক করে বলেন, لَيَكُوْنَنَّ مِنْ أُمَّتِىْ أَقْوَامٌ يَسْتَحِلُّوْنَ الْحِرَ وَالْحَرِيْرَ وَالْخَمْرَ وَالْمَعَازِفَ
‘আমার উম্মতের মধ্যে অবশ্যই একটি দল হবে যারা ব্যভিচার, রেশমী বস্ত্র, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল মনে করবে’।

[বুখারী হা/৫৫৯০; মিশকাত হা/৫৩৪৩।]

অর্থাৎ তারা এগুলিকে হালাল মনে করে ব্যবহার করবে। যদিও এগুলো হারাম।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও ইরশাদ করেন, আমার উম্মতের কিছু লোক মদের নাম পরিবর্তন করে তা পান করবে। আর তাদের মাথার উপর বাদ্যযন্ত্র ও গায়িকা রমনীদের গান বাজতে থাকবে। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে যমীনে ধ্বসিয়ে দিবেন।
[সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস : ৪০২০; সহীহ ইবনে হিব্বান হাদীস : ৬৭৫৮]

সহীহ মুসলিমে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ঘণ্টি, বাজা, ঘুঙুর হল শয়তানের বাদ্যযন্ত্র।
[সহীহ মুসলিম হাদীস : ২১১৪]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

যে ঘরে ঘণ্টি থাকে সেই ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না।
[সুনানে আবু দাউদ হাদীস : ৪২৩১; সুনানে নাসাঈ হাদীস : ৫২৩৭]

তথ্যসূত্রঃ
১. গান ও বাদ্যযন্ত্র : ইসলামী দৃষ্টিকোণ, মুহাম্মাদ দিলাওয়ার বিন গাজী
http://www.alkawsar.com/article/57


অভিযোগ

রাসূল কি হারাম হালালের বিধান দিতে পারেন? নাকি কেবল আল্লাহ হারাম হালাল করেনন?

তারা দলিল পেশ করেন সুরা আত তাহরিমের ১ম আয়াত থেকে জানতে পারি যে হারাম আর হালাল করার কোন এখতিয়ার রাসুল সা: কে আল্লাহ দেননি।

১.) হে নবী, আল্লাহ‌ যে জিনিস হালাল করেছেন তা তুমি হারাম করছো কেন? (তা কি এজন্য যে, ) তুমি তোমার স্ত্রীদের সন্তুষ্টি চাও? আল্লাহ ক্ষমাশীল এবং দয়ালু।
(৬৬নং সূরা তাহরিম, আয়াত ১)

জবাবঃ

এটা একটা মারাত্মক অভিযোগ। এর দ্বারা যদি কেউ এটা বোঝাতে চায়, আল্লাহর রাসূল খোদার উপর খোদগেরি করেছেন, আল্লাহ যা নিষেধ করেননি, তিনি তা নিষেধ করেছেন, তাহলে কতো মারাত্মক অভিযোগ হয়।

উক্ত আয়াতের প্রেক্ষাপট ছিল, রাসুল সা. মধু খাবেন না বলে কসম করছিল, তাই নাজিল হয়েছে। তাছাড়া, এই আয়াতটা দিয়েও বুঝা যাচ্ছে যে রাসুলের অধিকার আছে। কিভাবে?

এখানে আল্লাহ বলেছেনঃ আমি যা হালাল করেছি তা আপনি কেন হারাম করছেন?
এ থেকে বুঝা যাচ্ছে, রাসুলের অধিকার আছে হারাম করার! কিন্তু যেহেতু এই বস্তুটা আগেই আল্লাহ হালাল করেছেন (কোরআনে মধুর উপকারিতা বর্নিত আছে। দেখুনঃ ১৬নং সূরা নাহল: আয়াত ৬৯) তাই রাসুলের উচিত না সেটাকে হারাম করা। আর যে বিষয়ে তখনো বিধান নাযিল হয়নি সেটায় রাসুল নির্দেশ দিতে পারবেন।

আমাদের এটা বিশ্বাস করতে হবে “উনি মনগড়া কিছু বলেননি, সব ওহীর ওপর ভিত্তি করেই বলেছেন” (সুরা নাজমের শুরুর দিকে আয়াতটা আছে)।

৩.) সে নিজের খেয়ালখুশী মতো কথা বলে না।
৪.) যা তার কাছে নাযিল করা হয় তা অহী ছাড়া আর কিছুই নয়।
[ ৫৩নং সূরা আন-নাজম]

অথচ সূরা আহযাবে এমন আয়াত আছে, যার দ্বারা প্রমাণ হয় রাসূল হারাম হালালের বিধান দিতে পারেন।

‘আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন ক্ষমতা নেই যে, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্ট তায় পতিত হয়।’
[৩৩নং সূরা আহযাব, আয়াত ৩৬]

‘It is not fitting for a Believer, man or woman, when a matter has been decided by Allah and His Messenger to have any option about their decision: if any one disobeys Allah and His Messenger, he is indeed on a clearly wrong Path.’
(৩৩:৩৬)

আল্লাহ ও তার রাসূল উভয়েই আদেশ করতে পারেন। নিষেধ করতে পারেন।

বুঝতে চেষ্টা করতে হবে, এখানে স্পষ্টভাবে “আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ” বাক্য এসেছে।।
আল্লাহ এককভাবে “আল্লাহর আদেশ” বলতে পারতেন! তাই না?
উক্ত আয়াতে যদি আল্লাহ তা’আলা কেবল “আল্লাহর ইচ্ছায় বিয়ে” হচ্ছে (যায়েদ রা. এর বিয়ে প্রসঙ্গে আয়াতটি নাযিল হয়েছিল) বলে বিধান দিতেন, তবে রাসূলের কথা দু’বার কেন ব্যবহার করলেন?

1 thoughts on “রাসূল হারাম হালালের বিধান দিতে পারেন কিনা

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান