নারীরা যেভাবে ফ্রি-মেসনদের ক্রীড়ানকে পরিণত হচ্ছে

ড্যান ব্রাউনের লেখা বই আর মুভি দেখে সিক্রেট সোসাইটি সম্পর্কে জানার আগ্রহ তৈরি হয়। আর এতে করে একে একে আমার সামনে বেড়িয়ে পড়তে শুরু করে অনেক বিস্ময়কর তথ্য এবং তাদের অবাক করা সব কীর্তিকলাপ। প্রথমে ভেবেছিলাম, এটা নিছক অনুমানভিত্তিক ধারণা, কিন্তু পরবর্তীতে আমার সেই ভুল ভাঙ্গে এই উপমহাদেশে তাদের সদস্যদের সম্পর্কে জানতে পেরে। সংক্ষেপে কিছু বলার চেষ্টা করব।

ফ্রি-মেসন কী? পৃথিবীতে বেশ কয়েকটি সিক্রেট সোসাইটি বা গুপ্ত সংগঠন রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো- ফ্রি-মেসন। ফ্রি-মেসন মূলত ইহুদীদের তৈরি গুপ্ত সংগঠন। ষোড়শ শতকের শেষ এবং সতেরশ শতকের শুরুর দিকে তাদের আত্মপ্রকাশ ঘটে। তারা ইহুদী ধর্মীয় গোষ্ঠী থেকে উদ্ভুত হলেও তারা প্রচলিত কোনো ধর্মীয় আদর্শে বিশ্বাসী নন। বরং তাদের মধ্যে প্যাগান রিচুয়ালই বেশি দেখতে পাওয়া যায়। তারা সারাবিশ্বে প্রাচীন পৌত্তলিক বিভিন্ন আচারকে ‘সংস্কৃতি’র নাম দিয়ে প্রচার করে একত্ববাদের বিরুদ্ধে একপ্রকার যুদ্ধঘোষণা করেছে।

ভারতবর্ষে কখন ফ্রি-মেসনদের আগমণ ঘটে? ভারতবর্ষে প্রথম আগমণ ঘটে বৃটিশদের মাধ্যমে। এবং ভারতের মধ্যে প্রথম কোলকাতাতেই তাদের ‘লজ’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৭৩০ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির অফিসারদের প্রথম মিটিং সংঘটিত হয় কোলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে। তখন লজের সংখ্যা ছিল ৭২। ভারতবর্ষে পরিচিত স্বনামধন্য কয়েকজন ফ্রি-মেসনদের মধ্যে ছিলেন-

(১) স্বামী বিবেকানন্দ, তিনি ব্রাদার নরেন্দ্র নাথ দত্তের আন্ডারে ১৮৮৪ সালে ফ্রি-মেসনদের সদস্য হন। কোলকাতার ‘লজ অ্যাঙ্কর অ্যান্ড হোপ’।
(২) পন্ডিত মতিলাল নেহেরু, তিনি হলে পন্ডিত জওহরলাল নেহেরুর পিতা এবং ইন্দিরা গান্ধীর দাদা। কানপুরের ‘লজ হারমোনি’।
(৩) সি. রাজাগোপালচারি, তিনি ছিলেন তৎকালীন সময়ে ভারতের জেনারেল গভর্নর।
(৪) ফকরুদ্দিন আলী আহমেদ, ভারতের প্রেসিডেন্ট।
(৫) গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬৭-১৯৩৮), ছিলেন ভারতীয় চিত্রশিল্পী এবং কার্টুনশিল্পী। তার ভাই অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরও ছিলেন শিল্পী। জন্মেছিলেন বিখ্যাত জোড়াসাকোর ঠাকুর পরিবারে। তিনি গুণেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড় ছেলে, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাতিজা, গীরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাতি এবং প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের পুতি। এবং চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুরের বড়-আব্বা বা গ্রেট-গ্র্যান্ড ফাদার।
(৬) স্যার সুলতান মোহাম্মদ শাহ (আগা খা)
(৭) মনসুর আলী খান, পাতুয়াদির নবাব, এককালের বিখ্যাত ভারতীয় ক্রিকেটার, নায়ক সাইফ আলী খানের বাবা এবং শর্মিলা ঠাকুরের স্বামী।
(৮) স্যার সৈয়দ আহমদ খান
(৯) দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ
আরো অনেকে।

ফ্রি-মেসনদের কার্যক্রমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো নারী। তারা নারীদের বিভিন্নভাবে তাদের মতাদর্শের স্বার্থে ব্যবহার করছে। নীচে কিছু পয়েন্ট উল্ল্যেখ করা হলো।

(১) ‘নারী অধিকার আন্দোলন’ নামে বিভিন্ন সংগঠনের জন্ম দিচ্ছে। বিভিন্ন সমাজসেবা সংস্থার ব্যানারে তারা এসকল কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
(২) ‘নারী নেতৃত্বে’র স্লোগানের ব্যপক প্রচার প্রসার করছে বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে
(৩) ‘সুন্দরী প্রতিযোগীতা’র আয়োজনের মাধ্যমে নারীর রূপ-সৌন্দর্য-দেহকে পণ্য হিসেবে ব্যবহার করছে
(৪) কর্পোরেট লেভেলে নারীদের ব্যবহার করে ব্যবসায়িক ফায়দা লোটা হচ্ছে
(৫) খেলাধূলায় নারীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের পর্দা-আব্রুকে নষ্ট করছে
(৬) “প্রত্যেক ধর্ম নারীকে অসম্মান করেছে”, এমন একটা কথাকে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নারীকে ধর্মচ্যুত করার চেষ্টা করছে। নাস্তিক্যবাদি সমাজ প্রতিষ্ঠাই তাদের লক্ষ্য।
(৭) “পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার অন্তরায়”, এরকম কথা প্রচার করে তারা পুরুষদের বিপরীত পক্ষ হিসেবে দাড় করাচ্ছে নারীকে।
(৮) এন.জি.ও’র মাধ্যমে ‘সমঅধিকার’, ‘আর্থিক সহযোগীতা’ এবং ‘নারী কর্মসংস্থান’ সৃষ্টি করে ঘর থেকে নারীকে বের করে পুরুষদের সাথে কর্মসংস্থানে ‘প্রতিযোগী’ হিসেবে দাড় করাচ্ছে। অনুন্নত দেশগুলোতে এভাবে দারিদ্রতার সুযোগ নিচ্ছে। অথচ তারা দারিদ্রতার দুষ্ট চক্র থেকে তাদের বের করার চেষ্টা করছে না।
(৯) ‘সহশিক্ষা কার্যক্রম’-এর মাধ্যমে নারী-পুরুষকে একত্রে আসার সুযোগ করে দিয়ে ‘প্রেম’ এবং তার পরবর্তীতে ‘ব্যাভিচার’-এর ক্ষেত্র তৈরি করছে। নারীকে পুরুষের সামনে ছেড়ে দিয়ে তার মান-ইজ্জতের রক্ষার কোনো দায়িত্ব নিচ্ছে না।
(১০) পতিতাবৃত্তিকে নিষিদ্ধ করার চেষ্টা না করে বরং বিশ্বব্যাপী পতিতাবৃত্তিকে নারীর ‘অর্থনৈতিক কর্মকান্ড’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে এই দুষ্টু চক্রে নারীকে আজীবনের জন্য এই নারকীয় কর্মযজ্ঞের দিকে ধাবিত করছে।
(১১) নারী অপহরণ, স্মাগলিং, ট্রাফিকিং-এর সাথে ফ্রে-মেসনেরা সরাসরি সম্পৃক্ত।
(১২) নারীদের ‘ক্ষুদ্র ঋণ’-এর আওতায় এনে ‘সুদি কারবারে’র পথ বন্ধ না করে বরং সচল রেখে ‘নারীদের আত্মোন্নয়ন বা আত্মনির্ভরশীলতা’র নামে হয়ত সংসারে কিছু অর্থ আয়ের পথ খুলে দিচ্ছে, কিন্তু দারিদ্রতা থেকে চিরমুক্তি মিলছে না। বরং তারা সঠিক সময়ে ঋণের টাকা না দিতে পেরে সর্বস্ব হারাচ্ছে।
(১৩) নারী-পুরুষের সাথে কর্মক্ষেত্রে প্রতিযোগী করে তাদের কী লাভ? তারা এটা করে শ্রমের পারিশ্রমিক স্বল্প করছে। যেটাকে আমরা ‘সস্তা শ্রম’ বলতে পারি। পুরুষদের কর্মসংস্থান থেকে তাদের নারী কর্মসংস্থানের প্রতি নজর বেশি। কেন? কারণ- নারীকে পুরুষের তুলনায় অপেক্ষাকৃত স্বল্প বেতনে কাজ করানো যায়।

অতএব, আশা করি আমাদের নারীদের এ ব্যপারে সচেতনতা বৃদ্ধি পারে। আল্লাহ্ আমাদের বোঝার তাওফিক দিন।